Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন

পাতা

ব্যবসা বাণিজ্য

 

 অত্র উপজেলায় ফসল ধান, গম, পাট, রাই-সরিষা, আলু, ইক্ষুও ভুট্টা ইত্যাদির ব্যবসা মোটামুটি প্রচলিত।  রফতানী যোগ্য পন্য বলতে ধান, চাল, পাট ও আলু। ব্যবসা-বানিজ্য বলতে ধান, চাল, পাট,মাছ ও আলু ছাড়াও দ্রব্যাদী অত্র উপজেলায় ব্যবসা বানিজ্য হয়ে থাকে।

 

এছাড়াও অত্র উপজেলায় নদী পথে বিদেশের সাথে অনেক সময় মালামাল ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।

মৃৎ শিল্পঃ

মাটি আর মানুষ আমাদের বড় সম্পদ। এ সত্যের প্রকাশ ঘটেছে ভূরুঙ্গামারীর উপজেলার মৃৎশিল্পে। ভূরুঙ্গামারীর উপজেলার এঁটেল মাটির তৈজসপত্র দ্রব্যাধার পুতুল ও দেবদেবীর বিগ্রহ দেখতে সুন্দর, কাজে টেকসই। গবাদি পশুর সম্মুখে যে পাত্রে খাওয়া দেওয়া হয় তার নাম চাড়ি। ভূরুঙ্গামারীর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এটি তৈরি হয়। এছাড়া মটকি বা কোলা বা বিশাল বপু পাতিল তৈরি হয় টাঙ্গাইলের বিভিন্ন কুমার পাড়ায়।   মাটির তৈজসপত্র, সানকি, হাড়ি, সরা, বাটি, পিঠা তৈরির ছিদ্রযুক্ত পাতিল। দইয়ের ঠিলা, কোলা, গুড়ের মটকি প্রভৃতিভূরুঙ্গামারীর উপজেলার কুমারদের অনবদ্য সৃষ্টি। এসব মাটির জিনিসপত্র সাধারণত বিভিন্ন হাট-বাজার ও মেলায় বিক্রি হয়। ফেরি করেও বিক্রি করা হয়। ভূরুঙ্গামারীর উপজেলার কুমারদের মধ্যে অনেকে প্রতিমা নির্মাণে সিদ্ধহস্ত। এছাড়া ঘোড়া, গরু, বাঘ, হাতি, কুকুর, মাছ, আম, কাঁঠালসহ নানা ধরণের খেলনা শিশুদের মনোরঞ্জন করতে সক্ষম হয়। এই শিল্পের উন্নয়নে আজো কিছু করা হয়নি। আদিমকালের সাজ সরঞ্জাম দিয়ে কুমাররা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।

বাঁশ ও বেত শিল্পঃ

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বাঁশ ও বেতশিল্পেরও রয়েছে একটি সুপ্রাচীন ইতিহাস। বাঁশ দিয়ে শুধু বাঁশি তৈরি হয়নি। এদিয়ে তৈরি হয়েছে নানাবিধ উপকরণ। ভূরুঙ্গামারীর উপজেলার বেতঝোপ থেকে বেত কেটে এনে হাতের গুণে তৈরি করা হয় নানা প্রকার ব্যবহারযোগ্য জিনিস। বেতের ডালিয়া, ধান চাউলের বেড় ও তিল তিসি, সরিষা রাখার ছোট বড় ডুলি। বাটখারা প্রচলনের পূর্বে পাঁচসেরি মুনকা বা ধামার ব্যবহার ছিল। এখনো গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। বাঁশের চটি দিয়ে তৈরি হয় ডালি, চাটাই, ধাড়ি, কাইত্যা, বেড়, ডুলি, ঘরের বেড়া। এছাড়াও টুকরি, ঝাকা, কূলা চালনি, খালই, তালাই, প্রভৃতি।

আজো গ্রাম বাংলায় কৃষিকাজ করার জন্য কৃষকের মাথায় মাথাইল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বিপুল সংখ্যক নারীপুরুষ বাঁশজাত সামগ্রী তৈরির কাজে নিয়োজিত আছেন। উলিপুর উপজেলার পাট বেতের সাহায্যে চমৎকার হস্তশিল্প শীতল পাটি তৈরি হয়। বুনন কৌশলে ও কাজের দক্ষতায় যে কোন সাধারণ পাটিতেও ফুটিয়ে তোলা হয় জ্যামিতিক নকশা। এছাড়া জীবজন্তু, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, ফুল, লতাপাতা, মিনার, মসজিদ, নৌকা, পালকী প্রভৃতি ফুটে উঠে শীতল পাটির বুননের মাধ্যমে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী, ঘাটাইল, বাসাইল, মির্জাপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ারের পাইতারা সম্প্রদায় পটিয়াল বলে পরিচিত। তারা সাধারণ ও শীতল পাটি বুনে থাকে। উলিপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে ৫/৭ ফুট উঁচু একপ্রকার গাছের ছাল দিলে পাটি তৈরি করা হয়। গরমের সময় কারুকার্যময় শীতল পাটি বিছানায় ব্যবহার করলে শরীর ঠান্ডা হয়।

কাঠ শিল্পঃ

প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই সূত্রধর বা ছুতার আমাদের গ্রাম জীবনের প্রয়োজনে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি সরঞ্জাম যেমন, লাঙ্গল, ঈষ, মই, আচড়া, ইচামুগর, গরুর গাড়ি, গৃহনির্মাণ ও নৌ-নির্মাণে সূত্রধররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সামাজিক দাবি মিটানোই উলিপুর উপজেলারর সূত্রধরদের কাজ। খাট, পালঙ্ক, বারকোশ, পিঁড়ি, টুল, জলচৌকি থেকে শুরু করে আধুনিক টেবিল চেয়ার শোকেস, আলমিরা প্রভৃতি তৈরিতেও টাঙ্গাইলের সূত্রধররা দক্ষতার সাথে কাজ করছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর, ধনবাড়ী, কালিহাতী, ঘাটাইল, মর্জাপুর, করটিয়া উল্লেখযোগ্য কাঠশিল্পের স্থান।

জেলায় নদী ও খালের তীরে অনেক এলাকায় নৌকা তৈরি করা হয়। সাধারণ ধরণের নৌকায় করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দ্রব্যাদির ব্যবসা বাণিজ্য চলে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরণের মাছ ধরার নৌকাও তৈরি হয়।

ঘানি শিল্পঃ

উলিপুর উপজেলার তেলি বা কলু সম্প্রদায় তিল, তিসি, সরিষা প্রভৃতি তৈলবীজ ভেঙ্গে প্রস্ত্তত করে তৈল। ঘানি ঘোরাবার জন্য চোখ বাঁধা বলদ ব্যবহার করা হয়। কলের ঘানির সাথে বলদের ঘানি পাল্লা দিয়ে পারছে না বলে কলুরা আজ পেশাচ্যুত হয়ে পড়েছে। এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া মুচি ও ঋষিরা মৃত গরুর চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এদের মধ্যে অনেকে জুতাও তৈরি করে আসছে। এদের অনেকেই ঢাক, ঢোল, তবল, ডুগি প্রভৃতি তৈরি করে থাকে। এই মুচিদের সংগঠিত করতে পারলে চর্মশিল্পের অনেক উন্নতি বিধান করা সম্ভব। এছাড়াভূরুঙ্গামারীর উপজেলার গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে এক সময় ঢেঁকির প্রচলন ছিল।  এসব কুটির শিল্পের বিকাশ বহু বছর পূর্ব থেকেই। বিভিন্ন স্থান থেকে বহু লোক এখানে এসে বসবাস করে বংশানুক্রমিকভাবে এসব শিল্পের কাজ শুরু করেছে। কুটিরশিল্প ছিল ঐতিহ্যবাহী এবং ঐশ্বর্যমন্ডিত। এই শিল্পের এখনো প্রচুর সম্ভাবনী রয়েছে- শুধুমাত্র উদ্যোগের অভাব। বিপুল সংখ্যক মানুষ উল্লেখিত টাঙ্গাইলের কুটির শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন। প্রয়োজন, দক্ষতা বৃদ্ধি, দরকার কাচামাল, ঋণ এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা। নইলে উলিপুর উপজেলার এসব শিল্প একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। উলিপুর উপজেলারবাসীর উন্নয়নে তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে  শিল্পযাতে নতুন উদ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে বিষয়ে প্রতিটি সচেতন মানুষ ও সরকারের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

 

গত  ০৯-৩-২০১৪ হতে ১০-৩-২০১৪ খ্রিঃ পর্যন্ত উলিপুর উপজেলা চত্তরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ০২ দিন ব্যাপী মেলা হয়। উক্ত মেলায় মৃৎ শিল্প, বাঁশ বেত শিল্প,কাঠ শিল্প,ঘানি শিল্প ইত্যাদি হতে শুরু করে বিভিন্ন দোকান বসে। মেলায় জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম মহোদয় মৃৎ শিল্প, বাঁশ বেত শিল্প,কাঠ শিল্প,ঘানি শিল্প ইত্যাদির তৈরী সামগ্রী ক্রয় করে মেলার কেনা-বেচার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

 

ছবি